তিথি-নক্ষত্র অনুযায়ী পূজা ও ধর্মীয় আলোচনা সভা
- By Jamini Roy --
- 20 November, 2024
১৭ই নভেম্বর ২০২৪, রবিবার বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টায় উডসাইডের ওম শক্তি মন্দিরে গত ১৭ই নভেম্বর, রবিবার, একটি ব্যতিক্রমধর্মী আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের মূল বিষয় ছিল "তিথি-নক্ষত্র অনুযায়ী পূজা"। যা প্রবাসী সনাতনীদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ভাবনা বিনিময়ের একটি উন্মুক্ত মঞ্চ হিসেবে কাজ করে।
সভায় ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়। বক্তারা প্রতিটি বিষয়ে তাদের অভিমত তুলে ধরেন। আলোচিত বিষয়গুলো হলো:
- তিথি অনুযায়ী পূজার প্রাসঙ্গিকতা: তিথি-নক্ষত্র মেনে পূজা পালনের ঐতিহ্য এবং এর বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব।
- শিশু-কিশোরদের ধর্মীয় শিক্ষা:
- গীতা ও বৈদিক শিক্ষার মাধ্যমে ধর্মীয় জ্ঞান প্রদান।
- আচরণ শিক্ষা ও যোগব্যায়ামের গুরুত্ব।
- AFTER SCHOOL PROGRAM-এর মাধ্যমে শিশুদের মন্দিরমুখী করা।
- সংগীত, নৃত্য ও বাদ্যযন্ত্র শিক্ষার ব্যবস্থা।
- মন্দির ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি (শিশুদের জন্য): শিশুদের জন্য প্রার্থনা, দৈনিক মন্দির যাওয়ার অভ্যাস তৈরি এবং ধর্মীয় সচেতনতা বৃদ্ধি।
- মন্দির ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি (বয়স্কদের জন্য):
- গীতা, রামায়ণ, মহাভারত ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ পাঠ।
- কীর্তন ও ভগবদ পাঠের আয়োজন।
- স্বাস্থ্য সচেতনতা: স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে সেমিনার আয়োজন।
- আইন সচেতনতা: ইমিগ্রেশন ও আইনি সমস্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের আলোচনা।
- জব সেমিনার: কর্মসংস্থান বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান।
- মন্দির সংস্কার ও ফান্ড সংগ্রহ: মন্দিরের উন্নয়ন এবং নতুন হিন্দু সেন্টার স্থাপন।
- অসময়ে হল ভাড়া নিয়ে পূজা থেকে বিরত থাকা: সঠিক সময় ও তিথি মেনে পূজা করার প্রতি গুরুত্ব।
- জাতি-বর্ণ-গোত্র প্রথা: সামাজিক বিভেদ দূরীকরণের প্রয়াস।
- মাসিক অগ্রগতি বৈঠক: কার্যক্রমের উন্নয়ন এবং পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা।
- বিবাহের আগে ধর্মীয় দীক্ষা: অন্য ধর্মের পাত্র বা পাত্রীর সাথে বিবাহের আগে তাদের হিন্দু ধর্মে দীক্ষা নেওয়ার পরামর্শ।
- ধর্মীয় ও সামাজিক কাজে অর্থ ব্যয়: আয়ের একটি অংশ ধর্মীয় ও সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় করার গুরুত্ব।
সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রী নির্মল পাল। প্রধান অতিথি ছিলেন গুরুচক্র পরিবারের বর্তমান সভাপতি শ্রী আর.পি. দত্ত স্বপন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ধর্মীয় চিন্তাবিদ এবং সমাজ কর্মী শ্রী মৃদুল পাঠক। অনুষ্ঠানের পরিচালনায় ছিলেন শ্রী প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং মূল ভাবনার রূপকার ছিলেন শ্রী জয়দেব গাইন।
বিশিষ্ট ধর্মীয় চিন্তাবিদ এবং সমাজ কর্মী শ্রী মৃদুল পাঠক তার বক্তব্যে তিথি-নক্ষত্র মেনে পূজা করার ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিক প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। এছাড়া কেন কখনো কখনো তিথি মেনে পূজা করা সম্ভব না তা নিয়েও তিনি বিশদ আলোচনা করেন।
সভায় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট প্রবাসী ব্যক্তিত্বরা। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন শ্রী সুবল দেবনাথ, ভজন সরকার (সভাপতি, ইউনাইটেড হিন্দু'স অফ ইউ এস এ), প্রজ্ঞা নিউজের সম্পাদক উত্তম কুমার সাহা, রামদাস ঘরামী, অশোক আনন্দ দাশ, নারায়ণ চন্দ্র রায়, সুব্রত সরকার, মলয় ধর, কার্তিক মল্লিক, স্বজন বণিক, অজয় ধর, ভবতোস সাহা, দেবব্রত ঘোষ, এবং আরও অনেকে।
সভাপতি শ্রী নির্মল পাল পুরো আলোচনার সারাংশ তুলে ধরেন এবং উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। এই সভার মাধ্যমে প্রবাসী সনাতনী সমাজের মধ্যে ধর্মীয় সচেতনতা বৃদ্ধি, ঐক্য এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি অঙ্গীকার প্রকাশ পায়।
এই অনুষ্ঠানটি প্রবাসী সনাতনী সমাজের জন্য একটি মাইলফলক, প্রথম গ্রেড থেকে দশম গ্রেড পর্যন্ত সমস্ত সনাতন বিদ্যার্থীদের জন্য উপযুক্ত ধর্মীয় পুস্তক প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রিহিত হয়। এছাড়াও ধর্মীয় চেতনার পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নের পরিকল্পনা ও দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হয়।